অবসর থেকে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়ে কি ভুল করে ফেলেছিলেন লিওনেল মেসি? ২০১৬ কোপা আমেরিকার হারের পর দুঃখ-কষ্টে জাতীয় দলকে বিদায় বলে দেন আর্জেন্টাইন মহাতারকা। এরপর নানা মহলের অনুরোধের পর অবসরের সিদ্ধান্ত সরে আসেন তিনি। তার দুর্দান্ত পারফরম্যান্সই আর্জেন্টিনা জায়গা করে নিয়েছিল ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে। কিন্তু ভাঙাচোরা এক দল নিয়ে বেশিদূর যেতে পারেননি মেসি।
ফ্রান্সের কাছে ৪-৩ গোলে বাদ পড়তে হয় রাশিয়া বিশ্বকাপের শেষ ষোলো থেকে।
চার বছর পর আর্জেন্টিনার সামনে আবারও ফ্রান্স। এবার অবশ্য কোনো নকআউট ম্যাচ নয়। আগামীকাল ফাইনালে শিরোপা লড়াইয়ে নামছে আর্জেন্টিনা। চার বছর আগে যদি মেসি ভেবে থাকেন তার ফেরাটা ঠিক হয়নি, তবে আগামীকালের ফাইনালের আগে নিজেকে বোধহয় বড় ভাগ্যবানই ভাবছেন তিনি। ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপের ফাইনাল হারার পর পরপর দুই বছর আর্জেন্টিনা ওঠে কোপা আমেরিকার ফাইনালে। দুইবারই সঙ্গী হয় হারের কষ্ট। এরপর থেকেই আর্জেন্টিনা যেন হারিয়ে ফেলে। নামতে থাকে শুধু নিচের দিকে।
কিন্তু ২০১৮ বিশ্বকাপের পর নতুন এক মেসিকে দেখে বিশ্ব। সাময়িক দায়িত্ব নিয়ে কোচ লিওনেল স্কালোনি নতুনদের নিয়ে দল সাজান। মেসি তখন আবার সাময়িক বিরতিতে। তবে আর্জেন্টাইন অধিনায়ক ফিরে এসে কাছে পেলেন রদ্রিগো ডি পল, লিয়ান্দ্রো পারেদেস, জিওভানি লো সেলসো, লাওতারো মার্টিনেজ, আলেহান্দ্রো পাপু গোমেজদের। এরপর আস্তে আস্তে দলে এলেন ক্রিস্টিয়ান রোমেরো, লিসান্দ্রো মার্টিনেজ, এমিলিয়ানো মার্টিনেজদের। যারা একেকজন যোদ্ধা। যাদের যুদ্ধটা মেসির জন্য। মেসির পড়ন্ত বেলা রাঙিয়ে দেওয়ার জন্য।
বার্সেলোনার (বর্তমান ক্লাব পিএসজি) মহাতারকা মেসি আর্জেন্টিনায় এলেই যেমন যেন একাকী হয়ে পড়তেন। লড়াই তাকে একাই করতে হতো। কিন্তু ২০১৯ কোপা আমেরিকার ফাইনালের হারের পর থেকে মেসি যুদ্ধ করার রসদ গেলেন বাকিদের মধ্যে। এখন মেসি একা নন। লড়াই করার জন্য তার আশেপাশে খেলোয়াড়ের অভাব নেই। ডি পল-পারেদেসদের অবস্থা এমন যে, তারা খেলেনই মেসির জন্য। তাই তো মেসি মাঠের কোথাও ফাউলের শিকার হলে তেড়ে যান তারা। অধিনায়ককে রক্ষা করেন জান-প্রাণ দিয়ে।
আর্জেন্টিনার বর্তমান দলের অনেকেই মেসিকে দেখে বড় হয়েছেন। জাতীয় দলে খেলার অনুপ্রেরণা নিয়েছেন। তাই তো মেসির জন্য তাদের এমন টান। সেই টানেই কিনা গেল বছর কোপা আমেরিকায় নিজেদের উজাড় করে দিলেন সবাই। সাফল্যটাও আর্জেন্টিনা পেয়ে গেল। মেসির দীর্ঘদিনের বন্ধু আনহেল ডি মারিয়ার গোলে ব্রাজিলকে তাদেরই মাঠে হারিয়ে ২৮ বছর পর কোনো আন্তর্জাতিক শিরোপা জেতে আর্জেন্টিনা। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে মেসির যা প্রথম। আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে মেসি কিছু না, তার কোনো সাফল্য নেই-এই অপবাদ ওই শিরোপা জয়েই ঘুচে যায়।
মেসির জন্য যুদ্ধ করে, জীবন বাজি রেখেই যেন ওই শিরোপা ব্রাজিল থেকে নিয়ে আসেন ডি পল-মার্টিনেজরা। শিরোপা জয়ের আগে তাদের কথাতেই ছিল এর ইঙ্গিত। গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ বলেছিলেন, তিনি মেসিকে এতটাই ভালোবাসেন যে তার জন্য জীবন দিতে রাজি তিনি। ডি পলের কথাতেও ছিল একই সুর, ‘মেসি অত্যন্ত স্বচ্ছ মনের মানুষ। আমি ওর সঙ্গে সব কথা ভাগ করি। ভ্যালেন্সিয়াতে খেলার সময় মেসির সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হয়। ওর মতো অধিনায়ককে জাতীয় দলে পাশে পেয়ে আমি ধন্য। মেসি যদি আমাকে যুদ্ধে যেতেও বলে তাও আমি রাজি আছি। ’
ডি পলদের সেই যুদ্ধে কাল আরেকবার নামতে হবে। মেসির জন্যই আরেকবার জান বাজি দিতে খেলতে হবে। তাহলেই হয়তো ক্যারিয়ারের একমাত্র অপূর্ণতা বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফির ছোঁয়া পেয়ে যাবেন লিওনেল আন্দ্রেস মেসি।